জেলার খবর

মাদারীপুরে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে ৩ গ্রাম

  প্রতিনিধি ২২ জুলাই ২০২৫ , ৫:০৫:১৯ প্রিন্ট সংস্করণ

মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি :
মাদারীপুর সদর উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ নদী থেকে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙ্গনের মুখে পড়তেছে তিন গ্রামের হাজারো লোক ও শত শত হেক্টর কৃষি জমি। এই বিষয়ে প্রশাসনের কাছে একাধিকবার অভিযোগ দিয়েও কোন ফল পাননি ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা। প্রতিবাদ করতে গেলেই হুমকি-ধামকীর শিকার হতে হচ্ছে অসহায় মানুষদের। অতি দ্রুত এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে গ্রাম ও কৃষি জমিগুলো বাঁচাতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন স্থানীয়রা। আর এ সকল বালু উত্তোলন করছেন মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের হোগলপাতিয়া এলাকার আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তারা অবৈধভাবে কাজটি করে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মাদারীপুর সদর উপজেলা ঝাউদি ইউনিয়ন চর হোগলপাতিয়া গ্রামে আড়িয়াল খাঁ নদী থেকে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়।ফলে এর প্রভাব পড়ছে উপজেলার ১০ থেকে ১৫টি গ্রামের ওপর।এদিকে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু কাটার ফলে ঘরবাড়ি স্কুল, মসজিদ ভেঙে গেছে। এর ফলে এখন নদীর পারের বসবাসকারীরা আতঙ্কের মধ্যে দিনপার করছে। যদিও বালু উত্তোলনের জন্য তাদের কাছে কোনো ধরনের অনুমতি নেই। এতে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর মাঝখানে ও কূল ঘেঁষে কয়েকটি ড্রেজার মেশিন বসানো। এর প্রতিটি মেশিনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে একেকটি বাল্কহেড। প্রতিটি বোটে ১০ থেকে ১২ জন লোকের পাহারা। এদিকে বিকেল গেলে দেখা মেলে হোগলপাতিয়া এলাকার আড়িয়াল নদীর কূল ঘেঁষে তিন ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে দেদারচ্ছে তোলা হচ্ছে বালু। সেই বালু বাল্ডহেডের মাধ্যমে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এদিকে শুধু গ্রামই নয় জেগে ওঠা তীরে রয়েছে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের লিজ নেয়া শত শত হেক্টর কৃষি জমিও। গ্রাম আর কৃষি জমি সংলগ্ন নদী থেকে অপরিকল্পিত ভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে দিন-রাত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।নির্ঘুম এলাকাবাসী।
 উপজেলার কয়েকটি গ্রামের একাধিক গ্রামবাসী বালু উত্তোলনের কারণে দুর্দশার কথা জানিয়ে বলেন, এই বালু কাটার কারণে আমাদের ঘর অনেক কয়েকবার ভাঙ্গছে পরেছে।এখন পরের জমিতে ঘর তুলে থাকি যাওয়ার আর কোন জায়গায় নেই যা জমিজমা ছিলো সেগুলো নদী ভিতরে চলে গেছে। এখন যদি সরকার আমাদের দিকে একটু তাকায়।
স্হানীয় বাসিন্দারা রাজিব মন্ডল,রবি মন্ডল,আলিম আকন,সিরাজুল হাওলাদার, মকসেদ আকন,ইলিয়াস আকন,লালমিয়া হাওলাদার, সুমন মন্ডল,নিখিল বাড়ৈ,সেমল মন্ডল, নিজাম মিয়াসহ বেশ কয়েকজন বলেন, আমাদের তিন কানি জমি ছিল। এর মধ্যে দুই কানি জমির মাটি ভেঙে নদীতে চলে গেছে। আমাদের ছাড়াও অন্যান্য মানুষের ফসলি জমিও চলে গেছে। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে আমাদের জীবনটা বাঁচবে।
চর হোগলপাতিয়া গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা ইলিয়াস আকন বলেন, নদীটা অনেক দূরে ছিল। আমরা নদীর অনেক দূরে গিয়ে গবাদি পশু গোসল করতাম। ড্রেজারে বালু তোলার ফলে ধীরে ধীরে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রায় আধা মাইল পর্যন্ত চলে এসেছে। এখন হুমকির মুখে আমাদের কয়েকটি গ্রাম রয়েছে।
নদীর তীর ঘিরে বাড়ি রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, প্রতিদিন একটু একটু করে পাড় ভেঙে চলছে। মূলত অবাধে বালু তোলার কারণে সব সময় আতঙ্কে থেকেও আজ আমার বসত ভিটা ভাঙ্গতে হবে।এরচেয়ে বড় আর দুঃখ কি হতে পারে। প্রভাবশালী চক্রটি প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবাধে বালু উত্তোলন করছে।
নদীর কবলে ৮ বার বসতভিটা বিলীন হওয়া হোগলপাতিয়া গ্রামের আরেক কৃষক জলিল বেপারী ও মকসেদ আকন জানান, প্রতিবছর নদী ভাঙলেও এবার নদী ভাঙনের ভয়াবহ তীব্রতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও বিস্তীর্ণ এলাকা। নদী ভাঙ্গার মূল কারণটি ড্রেজার।
এদিকে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয় ঝাউদি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আবুল হাওলাদারের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
মাদারীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াদিয়া সাবাব বলেন, ‘নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা সম্পূর্ণভাবে নিষেধ। বালু উত্তোলনকারীরা আসলে আমাদের কথা বলে সুবিধা নিতে চায়। যারা বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও খবর

Sponsered content