কৃষি-পরিবেশ

সবজি চারা উৎপাদনে ব্যস্ত মানিকগঞ্জে কৃষকরা

               

  প্রতিনিধি ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ৪:৪৯:২০ প্রিন্ট সংস্করণ

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি :

মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলার হাজারো কৃষক শীতকালীন সবজির চারা উৎপাদনে জমিতে সময় দিচ্ছেন। সিংগাইর, সাটুরিয়া ও সদর উপজেলার কৃষকদের মাঠে তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, করলা, লাউ, মুলা, শসা, পটল, লালশাক ও পালংশাকসহ নানা জাতের সবজির বীজতলা তৈরি ও চারা পরিচর্যায় দিনরাত কাজ করছেন তারা।

কৃষকরা বলছেন, মৌসুম শুরুর আগেই সবজির আবাদ শুরু করতে পারলে বাজারে আগাম সরবরাহ দেওয়া সম্ভব হয়। ফলে একদিকে যেমন ভোক্তাদের চাহিদা মেটে, তেমনি কৃষকরা ন্যায্য দাম পান। কম খরচে বেশি লাভের আশায় অনেকে আগাম জাতের সবজি চাষে ঝুঁকছেন। আগাম ফসলের জন্য সার, কীটনাশক ও শ্রমিক ব্যয় কিছুটা বাড়লেও বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি করা যায় বলে কৃষকরা লাভবান হন। তারা জানান, প্রতিবছর স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকা ও আশপাশের জেলায় সবজি সরবরাহ করা হয়।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগাম ও মৌসুমি আবাদ মিলিয়ে সবজি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সম্ভব হবে।

মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত খরিপ-২ মৌসুমে জেলায় সবজির আবাদ হয়েছিল ২ হাজার ৬৭৬ হেক্টর জমিতে। ওই সময়ে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫২ হাজার ১৫৫ মেট্রিক টন, যেখানে হেক্টরপ্রতি গড় ফলন দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার ৯৪৯ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে সবজি আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৪৯৬ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা জমি চাষ, বীজতলা তৈরি ও চারা উৎপাদনে সক্রিয় রয়েছেন।

সাটুরিয়া উপজেলার পারতিল্লি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কেউ জমিতে হালচাষ করছেন, কেউ সার ও কীটনাশক প্রয়োগে ব্যস্ত, আবার কেউ পোকামাকড় দমনে কাজ করছেন। শীতকালীন চাষাবাদের নানা ধাপে কৃষকরা নিরলসভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, ‍এ বছর তিনি ৮ বিঘা জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি ও অন্যান্য সবজি আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। ইতোমধ্যে এক বিঘা জমিতে আটটি বেডে চারা উৎপাদন করেছেন। এখন বীজতলা থেকে চারা তুলে জমিতে রোপণের কাজ করছেন।

একই এলাকার কলেজপড়ুয়া যুবক আবু বকর জানান, পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি কৃষিকাজেও যুক্ত আছেন। এ মৌসুমে ফুলকপি ও বেগুনের চারা উৎপাদনের জন্য জমি প্রস্তুত করেছেন। বীজতলায় নিয়মিত সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করে গাছের যত্ন নিচ্ছেন তিনি।

গোলড়া এলাকার কৃষক সোলাইমান হোসেন বলেন, “আগাম চাষে একদিকে যেমন বাজারে দ্রুত ফসল তোলা যায়, তেমনি অন্য সময়ের তুলনায় দামও ভালো পাওয়া যায়। পরিবারে সচ্ছলতা আসে, বাড়তি খরচ সামাল দেওয়া সহজ হয়।”

তিনি জানান, মাঝে মাঝে বীজ, সার, কীটনাশক এবং শ্রম ব্যয়ের চাপ তাদের ভোগায়। এ কারণে সরকারি সহায়তা এবং সহজ শর্তে কৃষি ঋণ পাওয়ার দাবি জানান তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. বরীআহ নূর আহমেদ বলেন, “শীতকালীন সবজি আগাম উৎপাদন হলে বাজারে সরবরাহ বাড়বে এবং দামও স্থিতিশীল থাকবে। ফলে ভোক্তারা উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি কৃষকরাও লাভবান হবেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।”