বন্ধু দিবস ২০২৫
প্রতিনিধি ৫ আগস্ট ২০২৫ , ৫:০৯:২৫ প্রিন্ট সংস্করণ
মাহফুজা অনন্যা , লেখক :
একজনের নাম নীল। আরেকজন—পিঁপড়েভেজা দুপুরের মতো শান্ত, নাম তার রোদেলা। দুজনের পরিচয় হয়েছিল একটি লাইব্রেরির পাশের বেঞ্চিতে। একদিন নীল কবিতার খাতা নিয়ে বসে ছিল, আর রোদেলা এসেছিল তার ছোট ভাইয়ের স্কুলের পরীক্ষা চলাকালীন সময় কাটাতে। তখনো তারা একে অপরকে জানত না—তবু দুজনে মেঘ ও নদীর মতো আলতো করে পাশাপাশি বসে ছিল।
দিন, মাস, বছর—সব পেরিয়ে গেছে। এখন রোদেলা ব্যস্ত এক মানুষ, আর নীল কোনো এক দূরের শহরে কবিতা চাষ করে। তারা এখন একে অপরকে ফোন দেয় না। চিঠিও লেখে না। তবু, একটি নির্দিষ্ট দিনে, প্রতি বছর, একটিই উপহার আসে পোস্ট অফিস থেকে— কাগজে জলরঙে আঁকা একটি ছবি। ছবিতে থাকে—একটি বেঞ্চ, একটি বই, আর দুটি চেনা ছায়া।
নীল বলেছিল, ‘তুমি কবিতা পড়ো?’ রোদেলা বলেছিল, ‘আমি মানুষের হৃদয়ে কবিতা খুঁজি।’
সেই থেকে শুরু। তারপর সময় এক টুকরো কাগজের মতো উড়ে যেতে থাকে, আর তারা দুজনে একে অপরকে ভাঁজ করে রাখে বন্ধুত্ব নামের বইয়ের পাতায়।
রোদেলা ছিল খুব গুছানো। প্রতিটি কথার ভেতরেও একটি আলমারি রাখত—যেখানে আবেগ থাকে পরিপাটি করে সাজানো। আর নীল ছিল একটু পাগলাটে! শব্দ দিয়ে গল্প আঁকত, চা দিয়ে মন ভেজাতো!
তাদের সম্পর্ক ছিল–না প্রেম, না আত্মীয়তা—ছিল একধরনের নির্বাক বন্ধুত্ব , যেখানে চোখ কথা বলত, আর নীরবতাই ছিল তাদের সাহচর্যের ভাষা।
একদিন রোদেলা খুব ভেঙে পড়েছিল—তার মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিল! নীল সেদিন কিছু বলেনি, শুধু পাশে বসে তার হাত ধরে বলেছিল, ‘চলো, দোয়া করি’ । শব্দ নয়, চুপ থাকাটাই আজ আমাদের বন্ধুত্বের প্রার্থনা। রোদেলা সেদিন কষ্ট ও আনন্দে কেঁদে ফেলেছিল।
দিন, মাস, বছর—সব পেরিয়ে গেছে। এখন রোদেলা ব্যস্ত এক মানুষ, আর নীল কোনো এক দূরের শহরে কবিতা চাষ করে। তারা এখন একে অপরকে ফোন দেয় না। চিঠিও লেখে না। তবু, একটি নির্দিষ্ট দিনে, প্রতি বছর, একটিই উপহার আসে পোস্ট অফিস থেকে— কাগজে জলরঙে আঁকা একটি ছবি। ছবিতে থাকে—একটি বেঞ্চ, একটি বই, আর দুটি চেনা ছায়া।
বন্ধুত্ব সবসময় কথা চায় না, উপস্থিতি চায়। আর কিছু সম্পর্ক বন্ধুত্বের সংজ্ঞায় পড়ে না—তবু হৃদয়ের সবচেয়ে সুন্দর জায়গায় বসবাস করে। বন্ধু হলো এমন একজন, যার সঙ্গে হৃদয়ের গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে বিশ্বাস, ভালোবাসা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে। বন্ধু মানে শুধু পাশাপাশি থাকা নয়, বরং প্রয়োজনের সময় পাশে দাঁড়ানো, সুখে-দুঃখে একে অপরের ভাগ নেওয়া। বন্ধুত্ব হলো ভালোবাসা ও বিশ্বাসভিত্তিক সম্পর্ক — যেখানে কোনো স্বার্থের স্থান নেই। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সমঝোতায় — একে অপরের মতামত ও আবেগকে গুরুত্ব দেওয়া। সহানুভূতি ও মহানুভবতা — একে অপরের কষ্ট বুঝে নেওয়া, সান্ত্বনা দেওয়া, সত্যিকারের পাশে থাকা — শুধু আনন্দে নয়, দুঃখেও যে কেউ হাত ধরতে পারে, সে-ই প্রকৃত বন্ধু। নিজেকে প্রকাশের নিরাপদ স্থান— যেখানে ভয়ের কিছু নেই, বিচারহীন ভালোবাসা আছে।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন: ‘সেই তোমার বন্ধু যে তোমার হৃদয়ের কথা হৃদয়ে গ্রহণ করিতে পারে’। বন্ধুত্ব কোনো নিয়মে চলে না, চলে হৃদয়ের অনুভবে। সেটা হতে পারে ছোটবেলার সহপাঠী বা জীবনের এক সন্ধিক্ষণে দেখা কাউকে ঘিরে—যার সঙ্গে সম্পর্কটা হয় অদ্ভুতভাবে গভীর।
Friendship Day বা বন্ধু দিবস প্রতি বছর আগস্ট মাসের প্রথম রোববার পালিত হয় অনেক দেশে। ২০২৫ সালে বন্ধু দিবস হলো ৩ আগস্ট রোববার।
হ্যাঁ, বন্ধু হওয়ার জন্য কিছু মৌলিক যোগ্যতা বা মাপকাঠি থাকে। যদিও এগুলো লিখিত নিয়ম নয়—এগুলো মানবিক গুণ ও সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি করে। একজন প্রকৃত বন্ধুকে চেনা যায় তার আচরণ ও মানসিক গুণাবলির মাধ্যমে। যে বন্ধু গোপন কথা গোপন রাখতে পারে, বিশ্বাস ভঙ্গ করে না—সে বন্ধু হওয়ার যোগ্য। যে নিজের লাভের কথা না ভেবে পাশে থাকে, বিপদে-আপদে আগ বাড়িয়ে সাহায্য করে—তাকে সত্যিকারের বন্ধু বলা যায়। বন্ধু হওয়ার জন্য অপরের দুঃখ অনুভব করতে জানা চাই এবং তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হয়।
বন্ধুর চিন্তা, অনুভূতি, মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার মানসিকতাও বন্ধুত্বের প্রধান ভিত্তি। সবসময় কথা বলার চেয়ে কখনো কখনো চুপ করে শুনে যাওয়া—এটা একজন বন্ধুর বড় গুণ। যে বন্ধু প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, সময়মতো পাশে থাকে, সে একজন নির্ভরযোগ্য বন্ধু। ভুল করলে স্বীকার করে, ক্ষমা চায়—এই নম্রতা বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। বন্ধুর উন্নতিতে খুশি হওয়া, পিছনে টানার মানসিকতা না রাখা—এটাই বন্ধুত্বের প্রকৃত সৌন্দর্য। যে বন্ধুর উপস্থিতিতে নিজেকে লুকাতে হয় না তিনি প্রকৃত বন্ধু।
মানুষ সামাজিক জীব। জীবনের প্রতিটি বাঁকে পাশে একজন বিশ্বাসযোগ্য, অনুভূতিপূর্ণ মানুষের প্রয়োজন পড়ে—যাকে আমরা বলি বন্ধু। কিন্তু সবাই বন্ধু হতে পারে না। একসাথে চলা মানেই বন্ধু হওয়া নয়। প্রকৃত বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসার ভিত্তিতে। তাই বন্ধু হওয়ার জন্য কিছু মানবিক যোগ্যতা ও মাপকাঠি অপরিহার্য।
প্রথমত, একজন প্রকৃত বন্ধুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো বিশ্বাসযোগ্যতা। বন্ধু এমন একজন, যার কাছে নিজের না বলা কথাগুলো বলা যায়, যার কাঁধে মাথা রেখে কাঁদা যায়, এবং যাকে নিঃসঙ্কোচে বিশ্বাস করা যায়। যদি সে বিশ্বাস ভঙ্গ করে, তবে সে বন্ধুর মর্যাদা হারায়। দ্বিতীয়ত, সহানুভূতি ও সহমর্মিতা বন্ধু হওয়ার অন্যতম ভিত্তি। যে বন্ধু আপনার কষ্ট বুঝে, পাশে এসে দাঁড়ায়, আর শুধুই আনন্দের সঙ্গী হয়ে থাকে না, কেবল সেই-ই প্রকৃত বন্ধুর মর্যাদা পায়। তৃতীয়ত, বন্ধু হওয়া মানে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দেওয়া। স্বার্থের সম্পর্ক বন্ধুত্বের নামে এক ধরনের মিথ্যা অভিনয় মাত্র। বন্ধু কখনো নিজের সুবিধা খোঁজে না, বরং বিপদের সময় নির্ভয়ে পাশে দাঁড়ায়।
বন্ধুত্বের আরও একটি প্রয়োজনীয় গুণ হলো শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতা। প্রত্যেকের মত ও অনুভূতি আলাদা হতে পারে। প্রকৃত বন্ধুরা একে অপরকে শ্রদ্ধা করে, মতভেদ হলেও সম্পর্ক ভাঙে না। এছাড়া ভালো শ্রোতা হওয়া আত্মসমালোচনার মানসিকতা ও নির্ভরযোগ্যতা —এমন গুণাবলি একজন বন্ধুকে নিঃসন্দেহে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। সে কেবল পাশে থাকে না, প্রয়োজনে সঠিক পরামর্শও দেয়। বন্ধুত্বে হীনম্মন্যতা, প্রতিযোগিতা বা অহংকারের স্থান নেই। বরং একজন প্রকৃত বন্ধু আপনার সাফল্যে আনন্দিত হয়, পিছনে নয়, সামনে এগিয়ে দেয়। বন্ধু হওয়া একটি দারুণ গুণ। এটা জন্মগত নয়, অর্জনযোগ্য। যে নিজে ভালো মানুষ হতে পারে, সে-ই প্রকৃত বন্ধু হতে পারে। আর একজন প্রকৃত বন্ধু সারা জীবনের জন্য এক নির্ভরতার নাম।
বন্ধুত্ব মানবিক সম্পর্ক। বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, সহানুভূতি, ভালোবাসা—এসবের সঙ্গে লিঙ্গের কোনো সম্পর্ক নেই। নারী-পুরুষের ভিন্ন জীবনের অভিজ্ঞতা ও চিন্তার রকমফের—এই পার্থক্য একে অপরকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে। যেখানে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সীমাবোধ ও যোগাযোগ খোলামেলা, সেখানে নারী-পুরুষের বন্ধুত্ব দীর্ঘস্থায়ী ও গভীর হতে পারে। শিক্ষা, পেশা, শিল্প, সমাজসেবা—সবখানেই নারী-পুরুষ একসাথে কাজ করে। সেখানে বন্ধুত্ব তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। অনেক সমাজেই নারী-পুরুষের সম্পর্ক মানেই প্রেম বা দেহজ আকর্ষণ—এমন একটি সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। যখন কেউ বন্ধুত্বের সংজ্ঞাই বোঝে না, তখন সে সহজেই সম্পর্ককে ভিন্ন পথে ভাবতে শুরু করে।
নারী-পুরুষের বন্ধুত্ব অনেক সময় সামাজিক কটূক্তি, প্রশ্নবাণ কিংবা ভুল ব্যাখ্যার শিকার হয়। বন্ধুত্ব তখনই সুন্দর, যখন তা নিঃস্বার্থ, স্বচ্ছ এবং মানবিক—লিঙ্গের গণ্ডির বাইরে গিয়ে। নারী ও পুরুষ—দুজনেই মানুষ, কিন্তু সমাজ বহুদিন ধরে তাদের পারস্পরিক সম্পর্ককে সীমাবদ্ধ করে তুলেছে। যেখানে নারী-পুরুষের সম্পর্ক বলতেই বোঝানো হয় প্রেম, দাম্পত্য বা যৌন আকর্ষণ, সেখানে একটি প্রশ্ন বারবার উঠে আসে: নারী ও পুরুষ কি কেবল বন্ধু হতে পারে?
এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে আমাদের বুঝতে হবে—বন্ধুত্ব কী? বন্ধুত্ব একধরনের আন্তরিক ও মানবিক সম্পর্ক, যা গড়ে ওঠে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, সহানুভূতি ও মানসিক যোগাযোগের উপর ভিত্তি করে। এটি কোনো লিঙ্গনির্ভর সম্পর্ক নয়। একজন ভালো বন্ধু হতে হলে হৃদয় লাগে, লিঙ্গ নয়। আধুনিক সমাজে নারী ও পুরুষ একসাথে কাজ করছে, পড়াশোনা করছে, স্বপ্ন গড়ছে।
এই সহযাত্রা চলাকালীন অনেক সময় আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে—যা বন্ধুত্বের রূপ নেয়। যদি সেই সম্পর্কের মধ্যে স্বচ্ছতা, সীমাবোধ, এবং পারস্পরিক সম্মান থাকে, তবে নারী-পুরুষের বন্ধুত্ব নিঃসন্দেহে সম্ভব। তবে এই বিষয়টিকে ঘিরে অনেক সামাজিক কুসংস্কার ও ভুল দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, নারী-পুরুষের বন্ধুত্ব মানেই কোনো গোপন প্রেম, অথবা ভবিষ্যতের দাম্পত্য সম্পর্কের ইঙ্গিত। ফলে একটি পবিত্র সম্পর্কও অনেক সময় কুৎসা ও সন্দেহের শিকার হয়।
এই সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিই আমাদের সমাজে নারী-পুরুষ বন্ধুত্বের পথে সবচেয়ে বড় বাধা। এছাড়া অনেক সময় ব্যক্তিগত পরিপক্বতার অভাব, সীমারেখা অতিক্রমের প্রবণতা, কিংবা ভুল বোঝাবুঝিও এই সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই বন্ধুত্ব গড়তে হলে যেমন মন দরকার, তেমনি চাই দায়িত্ববোধ, স্পষ্টতা ও পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা।আসলে নারী ও পুরুষ বন্ধুত্ব করতে পারে, যদি তারা নিজেদের মানুষ হিসেবে দেখে। যদি সম্পর্কের ভিত তৈরি হয় নৈতিকতা ও সহমর্মিতার উপর, তবে সেই বন্ধুত্ব প্রেম বা দাম্পত্যের চেয়েও শক্তিশালী হতে পারে। নারী ও পুরুষের মধ্যে বন্ধুত্ব অবশ্যই সম্ভব তবে এর জন্য প্রয়োজন মানসিক পরিপক্বতা, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। বন্ধুত্ব হৃদয়ের বিষয়, লিঙ্গের নয়।
‘নারীই নারীর শত্রু’—এই প্রচলিত কথাটি আমরা অনেকেই শুনেছি। এটি সমাজে এতটাই গেঁথে গেছে যে, নারীর প্রতি নারীর সহমর্মিতা, সহানুভূতি কিংবা বন্ধুত্বের জায়গা যেন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। কিন্তু বাস্তবতা কি সত্যিই এমন? নারী কি নারীর বন্ধু হতে পারে?
সমাজে যুগ যুগ ধরে পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাধারা নারীদের একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছে। পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা নারীদের একে অপরের প্রতি সন্দেহ, ঈর্ষা ও প্রতিযোগিতার মধ্যে ফেলে রেখেছে। ঘর থেকে কর্মক্ষেত্র—সব জায়গাতেই নারীকে নারীর সঙ্গে তুলনা করা হয়: কে বেশি সুন্দর? কে বেশি সফল? কে বেশি যোগ্য পাত্র পেয়েছে? এই তুলনা নারীদের একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর বদলে অনেক সময় মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। তবে সব নারী-নারী সম্পর্ক যে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, তা নয়। পরিবারে একজন মা তার মেয়ের প্রথম বন্ধু হতে পারে। বোনেরা হতে পারে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সহচর।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিংবা কর্মজীবনে নারীদের মধ্যে হতে পারে গভীর মমত্বপূর্ণ বন্ধন। বহু নারীরাই নারীর পাশে দাঁড়াচ্ছেন—অধিকার আদায়ে, কণ্ঠস্বর জোরালো করতে, কিংবা নির্যাতিতার পাশে মানবিক বন্ধুর মতো। নারী যখন নিজেকে প্রতিযোগী নয়, বরং সহযাত্রী ভাবতে শেখে, তখন নারীই নারীর শ্রেষ্ঠ বন্ধু হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু এর জন্য দরকার মানসিক পরিপক্বতা, সামাজিক সচেতনতা, এবং লিঙ্গসমতা সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা। আরও দরকার, পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার গোঁড়ামি থেকে নারীদের মুক্তি—যেখানে একজন নারীকে আরেক নারীকে ছোট করে নয়, বরং শক্তি দিয়ে দেখার সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।
বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, নারী সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারীদের বন্ধুত্ব ও সহমর্মিতার দৃষ্টান্ত বাড়ছে। নারীরা নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছে, অন্যকে অনুপ্রাণিত করছে, সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছে—যা প্রমাণ করে যে নারী নারীর বন্ধু হতে পারে, এবং হচ্ছে। নারী নারীর বন্ধু হয় যদি সমাজ সেই বন্ধুত্বকে সঠিকভাবে লালন করতে শেখে। প্রতিযোগিতা নয়, সহযোগিতা—এই নীতিতেই গড়ে উঠতে পারে নারীর প্রতি নারীর আন্তরিক ভালোবাসা, মমতা ও বন্ধুত্ব। নারী একা নয়, নারীই নারীর হাত ধরলে সমাজে পরিবর্তন আসবে।
বন্ধু দিবস কেবল একটি দিন নয়, এটি একটি অনুভব—যেখানে হৃদয় খুঁজে পায় আশ্রয়, ভাষাহীনতা খুঁজে পায় বোঝাপড়া। জীবনের শত ব্যস্ততার মাঝেও একজন সত্যিকারের বন্ধু হয়ে ওঠে আত্মার সবচেয়ে বিশ্বস্ত আশ্রয়। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়— বন্ধুত্ব হচ্ছে সেই আলো, জানি শব্দে আমাদের ভেতরের অন্ধকার কে মুছে দেয়। ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় ভরে উঠুক পৃথিবীর সমস্ত বন্ধুত্বের বন্ধন—আজ, কাল, প্রতিদিন।
লেখক : কবি ও কথাসাহিত্যিক।