প্রতিনিধি ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ৫:৫৬:২০ প্রিন্ট সংস্করণ
১৯৮২ সালে ২৪ মার্চ স্বৈরশাসক হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে একাধিকবার গ্রেফতার করে তাঁকে গৃহবন্দি করে রাখে। মতিঝিল বা প্রেসক্লাবে কোনো কর্মসূচি থাকাকালীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আগের দিন হোটেল পূর্বাণীতে অবস্থান করতেন। সে হোটেল পূর্বাণী থেকেও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু তাঁকে আন্দোলনের মাঠ থেকে একবিন্দুও বিচ্যুৎ রাখতে পারেনি। তাঁর আপোসহীন নেতৃত্ব, দৃঢ়তা ও মনোবলের কারণে আন্দোলন থেকে দূরে সরাতে পারেনি।
তবে একাধিকবার স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন হোঁচট খেয়েছিল। যে সমস্ত নেতা-নেত্রীরা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন তারা রাতের আঁধারে হালুয়া-রুটির জন্য স্বৈরশাসকের সাথে গোপন আঁতাত করতেন। ইতিহাস সাক্ষী দিবে যে, বিরোধী দলের নামধারী কিছু নেতা-নেত্রী আন্দোলনের পিঠে ছুরিকাঘাত করে এরশাদের সাথে হাত মিলিয়েছিলেন এবং আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে এরশাদকে সহযোগিতা করেছিলেন।
আমরা একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেই আন্দোলন থেকে কখনো পিছপা হননি। স্বৈরশাসকের চোখ রাঙানোকে ভয় পাননি। স্বৈরশাসকের সাথে আপোস করেননি। তার আপোসহীনতার কারণে ’৯০ সালের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুস্থান সুসংগঠিত হয়েছিল। সেই ছাত্র-গণঅভ্যুস্থানকেই ছাত্র-জনতা নিঃস্বার্থভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপোসহীনতার কারণে সমর্থন দিয়েছে। সমর্থন দিয়েছিল বলেই সেদিন আন্দোলন সফল হয়েছিল।
স্বৈরশাসকের পতনের পরে ১৯৯১ সালে যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছিল। তরুণ সমাজ বেগম খালেদা জিয়াকে সমর্থন দিয়েছিল বলেই বিএনপি জয়লাভ করে এবং ক্ষমতায় এসেছিল। ছাত্র-জনতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপোসহীনতার প্রতি সম্মান জানিয়ে ’৯১ সালের নির্বাচরে ভোটের মাঠে বিএনপির সাথে থেকে ধানের শীষকে জয়লাভ করিয়েছিল। সেটা সম্ভব হয়েছিল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপোসহীন নেতৃত্বের কারণেই।
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ আন্দোলনকে পিছনে টেনে ধরেছেন। ১৯৮৬ সালে চট্টগ্রামের একটি জনসভায় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যারা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যাবে, তারা জাতীয় বেঈমান হিসেবে নিহ্নিত হবে। তার ২৪ ঘন্টা পর শেখ হাসিনা ঢাকায় এসে এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষনা দিয়ে জাতীয় বেঈমান হিসেবে চিহ্নিত হলেন। যার ফলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ১৫ দল ভেঙে গেল। অপরদিকে দেশনেত্রী আপোসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যাননি। সাংবাদিকরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে প্রশ্ন করেছিলেন, আওয়ামী লীগের নেত্রী তো নির্বাচনে চলে গেলেন, আপনি কি নির্বাচনে যাবেন? আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, আমার ছাত্র জয়নাল, জাফর, দীপালী সাহাসহ সেলিম দেলোয়ারের রক্ত ঝরিয়েছে। আমার শ্রমিক নেতাদের রক্ত ঝরিয়েছে, আমি সেই রক্তের সাথে বেঈমানি করে স্বৈরশাসক এরশাদের কোনো নির্বাচনে যাবো না।
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সেই আপোসহীনতার কারণে দেশব্যাপী ছাত্র-জনতা খালেদা জিয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কারণে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ১৫ দল ভেঙে রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনুরা আলাদা হয়ে যান।
কিছুদিন পর নির্বাচন হয়েছিল ঠিকই কিন্তু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চাপের কারণে জনতার দাবির কারণে স্বৈরশাসক সেই সংসদ ভেঙে দিতে বাধ্য হন। সেই সংসদ কিন্তু বেশিদিন টিকেনি। আন্দোলনের দাবানল চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। উত্তাল তরঙ্গের মতো আন্দোলনের ঢেউ সারা দেশের মানুষকে আলোড়িত করেছিল। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপোসহীন নেতৃত্ব যদি সেদিন দৃঢ়ভাবে না থাকতো, তাহলে আন্দোলন সফল হতো না। হয়তো আন্দোলন আরও দীর্ঘায়িত হতো। আমাদের আরও রক্ত ঝরতো। সেই জন্যই সেইদিন আন্দোলনটা সফল হয়েছিল।
একটা বিষয় আমি উল্লেখ করতে চাই। যুগে যুগে দেশে দেশে সিরাজউদ্দৌলা-মীরজাফরদের জন্ম হতে থাকবে। সেই আন্দোলনের সময় আমাদের দেশেও সিরাজউদ্দৌলা-মীরজাফরদের আবির্ভাব ছিল। তাদের যেই জায়গায় স্থান পাওয়ার কথা, জনগণ তাদেরকে সেই জায়গায়ই পৌছিয়েছেন। জনগণ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সম্মান ও শ্রদ্ধার সাথে স্থান দিয়েছিলেন। অন্য নেতা-নেত্রীদেরকে মীরজাফরের মতো ঘৃণা প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে। এটাই প্রমাণিত হয়েছে দীর্ঘ নয় বছর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপোসহীন নেতৃত্বেই সফল হয়েছে।
লেখক : আমান উল্লাহ আমান
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক মন্ত্রী