প্রতিনিধি ৬ আগস্ট ২০২৫ , ৫:৩৭:২১ প্রিন্ট সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
চীনের গুয়াংডং প্রদেশজুড়ে মশাবাহিত ভাইরাস চিকুনগুনিয়ায় গত জুলাই মাস থেকে ৭ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় কোভিড-১৯ মহামারীর সময়কার মতো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেখানে।
সবচেয়ে বেশি চিকুনগুনিয়া রোগী পাওয়া গেছে ফোশান শহরে। এছাড়াও অন্তত আরও ১২টি শহরে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। কেবল এক সপ্তাহেই নতুন করে প্রায় ৩ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে।
চীনে মশাবাহিত এই ভাইরাস বিরল হলেও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে এর প্রাদুর্ভাব সাধারণ ঘটনা।
ভাইরাসের গতি-প্রকৃতি:
চিকুনগুনিয়া মূলত ছড়ায় সংক্রমিত মশার কামড়ে। এতে জ্বর এবং গাঁটে তীব্র ব্যথা হয়, যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বছরের পর বছর স্থায়ী হয়।
তবে এটি এক ব্যক্তি থেকে আরেকজনের দেহে সরাসরি ছড়ায় না বলে জানিয়েছে বিবিসি।
চীন সরকার জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া রোগীদের ৯৫ শতাংশই সাত দিনের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন। তবে ভাইরাসটি সম্পর্কে দেশটিতে সচেতনতা কম থাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
সোমবার হংকংয়ে প্রথম চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়। আক্রান্ত ১২ বছর বয়সী এক কিশোর সম্প্রতি ফোশান শহর ভ্রমণ করেছিল।
চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র চীন ভ্রমণকারীদের জন্য ‘বাড়তি সতর্কতা’ অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে।
সংক্রমণ ঠেকাতে নানা উদ্যোগ:
চীনে গুয়াংডংয়ের স্থানীয় প্রশাসন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ‘জোরালো ও দ্রুত পদক্ষেপ’ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জ্বর, গাঁটব্যথা বা র্যাশের মতো উপসর্গ দেখা দিলে মানুষজনকে নিকটস্থ হাসপাতালে যেতে বলা হয়েছে, যাতে ভাইরাস পরীক্ষা করা যায়।
বাড়িতে জমে থাকা পানি সরাতে বলা হচ্ছে বাসিন্দাদের। ফুলের টব, কফি মেশিন, খালি বোতলেও যদি পানি জমে থাকে, তবে জরিমানা গুনতে হতে পারে—যার পরিমাণ সর্বোচ্চ ১০ হাজার ইউয়ান (প্রায় ১ হাজার ৪০০ ডলার)।
চিকুনগুনিয়া ছড়ানো ছোট মশাগুলোকে খেয়ে ফেলতে পারে এমন বড় প্রজাতির মশা বা ‘হাতি মশা’ ছেড়ে দেওয়াসহ প্রচুর মশাখেকো মাছও ছাড়া হচ্ছে।
ফোশান শহরের হ্রদে ইতোমধ্যে ছাড়া হয়েছে ৫ হাজার লার্ভা-খেকো মাছ। শহরের এলাকাগুলোতে জমে থাকা পানির উৎস খুঁজে বের করতে ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রোন।
এইসব নানা পদক্ষেপের মধ্যে ফোশান ভ্রমণ করে আসা মানুষজনদেরকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। তবে পরে তা প্রত্যাহার করা হয়।
চীনের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম উইবোর এক ব্যবহারকারী এই ব্যবস্থাকে কোভিড-১৯ মহামারীর সময়কার আরোপিত বিধিনিষেধের সঙ্গে তুলনা করেছেন এবং এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি লিখেছেন, “এটা খুবই পরিচিত লাগছেৃ কিন্তু সত্যিই কি এই পদক্ষেপগুলো প্রয়োজন?” আরেকজন লিখেছেন, “কোয়ারেন্টাইনের মানে কী? আক্রান্ত মানুষ কি মানুষকে কামড়াবে নাকি?”
চিকুনগুনিয়া রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, অধিকাংশ মানুষ মশার কামড়ের ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে লক্ষণ অনুভব করে। এর মধ্যে রয়েছে— জ্বর, গাঁটে ব্যথা, র্যাশ, মাথাব্যথা, পেশিতে ব্যথা, জয়েন্ট ফুলে যাওয়া।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীরা এক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠলেও, কিছু কিছু ক্ষেত্রে গাঁটে ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়। নবজাতক, বয়স্ক ও হৃদরোগ বা ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
এই ভাইরাসে আক্রান্তদের কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, তবে মৃত্যুহার খুবই কম।
চিকুনগুনিয়া প্রথম শনাক্ত হয় ১৯৫২ সালে, তানজানিয়ায়। এরপর এটি ছড়িয়ে পড়ে আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। এখন পর্যন্ত ১১০টির বেশি দেশে ভাইরাসটি পাওয়া গেছে।
প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল— জমে থাকা পানি দূর করে মশার বংশবিস্তার ঠেকানো।