প্রতিনিধি ১৯ জুলাই ২০২৫ , ৮:০৯:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক :

বাংলাদেশের ব্যাংক খাত দীর্ঘদিন ধরেই কাঠামোগত দুর্বলতা, খেলাপি ঋণের বিস্তার, সুশাসনের ঘাটতি ও জনগণের আস্থার সংকটে জর্জরিত। বিগত সরকারের শেষ সময়গুলোতে আর্থিক খাতের ভিত অনেকটাই নড়বড়ে হয়ে পড়ে। যেখানে ঋণ খেলাপি হয়ে ওঠে ব্যাংক খাতের ‘বিষফোড়া’। ঋণের খেলাপি বাড়লেও নানা কায়দায় তা গোপন রাখার প্রবণতাও ছিল।
বিগত বছরগুলোতে বেনামি ও কাগুজে ঋণের কারণে ভেঙে পড়ে ইসলামী খাতের একাধিক ব্যাংক। পর্ষদে অযোগ্য লোক বসিয়ে করা হতো অর্থ বাণিজ্য। এসব সংকট কাটিয়ে উঠতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরই মধ্যে নানামুখী সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। সেসব উদ্যোগের কিছু বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সংস্কারের কার্যক্রম শুরু হলেও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি এখনো পুরোপুরি দৃশ্যমান নয়। এর সুফল পেতে সময় লাগবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে—বাণিজ্যিক ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন, ব্যাংকিং টাস্কফোর্স গঠন, ডলার বাজারে হস্তক্ষেপ ও স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আর্থিক নীতির কড়াকড়ি ও ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি ব্যবস্থার প্রস্তুতি।
ব্যাংক খাতে টেকসই পরিবর্তন আনতে সময়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক সংস্কার প্রয়োজন। তার মতে, ‘ভালো পরিকল্পনা থাকলেও রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও কার্যকর বাস্তবায়ন ছাড়া এসব উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে না।- গভর্নর
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর স্পষ্ট করে বলেছেন, ব্যাংক খাতে টেকসই পরিবর্তন আনতে সময়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক সংস্কার প্রয়োজন। তার মতে, ‘ভালো পরিকল্পনা থাকলেও রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও কার্যকর বাস্তবায়ন ছাড়া এসব উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে না।’
বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে নতুন চ্যালেঞ্জ
বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতা, যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ নীতি, বৈশ্বিক ঋণের সুদহার বৃদ্ধি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোর মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দরপতন এবং বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক সতর্কবার্তা বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখনই গভীর সংস্কার প্রয়োজন। যার মধ্যে রয়েছে—খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংক একীভূতকরণ বা মার্জার, পরিচালন কাঠামোতে স্বচ্ছতা এবং প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং সেবার ওপর জোর দিতে হবে। এর মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব। সর্বোপরি এ খাতের ওপর জনগণের আস্থা ফেরানোর বিকল্প নেই।
ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো কী?
অর্থনীতিবিদদের মতে, সবকিছুই ব্যর্থ তা বলা যাবে না। বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনও ঘটেছে। উল্লেখযোগ্য কিছু অগ্রগতি হলো—আইনগত কাঠামো শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা, প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি (ডিজিটাল ব্যাংকিং, অনলাইন রিপোর্টিং সিস্টেম), তারল্য সংকটে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তা, তদারকি ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে নতুন নির্দেশনা এবং দুর্বল ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম মূল্যায়ন।
খেলাপি ঋণ, দুর্বল ব্যাংকসমূহ একীভূতকরণের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ব্যাংক খাতে আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। ফলে ব্যাংক ঋণ, আইনি বিধিবিধান, বাজার, পরিচালনা ও কৌশলগত ঝুঁকি কার্যকরভাবে চিহ্নিত করা সহজ হবে।- এম হেলাল আহমেদ জনি
বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বড় পদক্ষেপ হচ্ছে, ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি চালুর সিদ্ধান্ত। এর ফলে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি চিহ্নিত করা, ম্যানেজমেন্ট মূল্যায়ন ও তদারকির ধারা আরও সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর হবে।











